
ক্লাউড কম্পিউটিং হলো ইন্টারনেট-ভিত্তিক সেবা প্রদান পদ্ধতি যেখানে ডেটা সংরক্ষণ, প্রসেসিং এবং অ্যাপ্লিকেশন চালানো হয় দূরবর্তী সার্ভারে। অর্থাৎ, আপনার ডিভাইসে না রেখে তথ্য সংরক্ষিত থাকে "ক্লাউডে"—একটি নিরাপদ, স্কেলেবল এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সার্ভারে।
উদাহরণ:
- আপনি Google Drive-এ ফাইল আপলোড করেন → ফাইলটি Google-এর ডেটা সেন্টারে সংরক্ষিত
- আপনি Netflix-এ ভিডিও দেখেন → ভিডিওটি ক্লাউড সার্ভার থেকে স্ট্রিম হয়
তথ্য কোথায় থাকে?
আপনার তথ্য ক্লাউডে থাকে মানে কী?
আপনার তথ্য আসলে থাকে:
- বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত ডেটা সেন্টার নামক অত্যাধুনিক ভবনে
- এই ডেটা সেন্টারগুলোতে থাকে হাজার হাজার সার্ভার, শক্তিশালী কম্পিউটার এবং স্টোরেজ ইউনিট
- বিশ্বমানের কোম্পানি যেমন Amazon (AWS), Google (GCP), Microsoft (Azure) এসব ডেটা সেন্টার পরিচালনা করে
বৈশিষ্ট্য:
- ২৪/৭ নিরাপত্তা
- আগুন, ভূমিকম্প বা বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে সুরক্ষিত
- ব্যাকআপ ও রিডান্ড্যান্সি সিস্টেম
ক্লাউড কম্পিউটিং-এর প্রকারভেদ
১. Public Cloud
সবার জন্য উন্মুক্ত পরিষেবা, যেমন Google Drive, Dropbox।
২. Private Cloud
কোনো একটি প্রতিষ্ঠান নিজস্বভাবে ব্যবহার করে, যেমন ব্যাংকের নিজস্ব সার্ভার।
৩. Hybrid Cloud
Public ও Private-এর সমন্বয়।
ক্লাউড কম্পিউটিং-এর পরিষেবা ধরন
১. IaaS (Infrastructure as a Service)
- সার্ভার, নেটওয়ার্ক, স্টোরেজ ভাড়া নেওয়া
- উদাহরণ: Amazon EC2
২. PaaS (Platform as a Service)
- অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের জন্য প্ল্যাটফর্ম
- উদাহরণ: Google App Engine
৩. SaaS (Software as a Service)
- সফটওয়্যার ব্যবহার ইন্টারনেটের মাধ্যমে
- উদাহরণ: Gmail, Zoom, Canva
ক্লাউড কম্পিউটিং-এর সুবিধা
- তথ্য সবসময় অ্যাক্সেসযোগ্য – যেকোনো জায়গা থেকে
- ব্যাকআপ ও রিকভারি সহজ
- স্কেল করা যায় খুব সহজে – ব্যবসা বাড়লে সার্ভার বাড়াতে সমস্যা নেই
- খরচ সাশ্রয়ী – হার্ডওয়্যার কিনতে হয় না
- সহজ কোলাবোরেশন – একসাথে কাজ করা সহজ
নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা
অনেকেই মনে করেন, “তথ্য ক্লাউডে রাখলে হ্যাক হয়ে যাবে না তো?”
সত্যি বলতে, বড় বড় ক্লাউড কোম্পানিগুলো:
-
শক্তিশালী এনক্রিপশন ব্যবহার করে
-
মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন দেয়
-
নিয়মিত সাইবার অডিট করে
তবে ব্যবহারকারীকে নিজের পক্ষ থেকেও সতর্ক থাকতে হয়—যেমন শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা ও সন্দেহজনক লিঙ্ক এড়ানো।
ক্লাউড কম্পিউটিং-এর ব্যবহার কোথায়?
- ব্যক্তিগত পর্যায়ে: Google Photos, OneDrive
- ব্যবসায়ে: SAP, Salesforce
- শিক্ষা খাতে: Google Classroom, Microsoft Teams
- স্বাস্থ্যসেবা: ক্লাউডভিত্তিক রিমোট মেডিকেল রিপোর্ট
- আইটি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে: GitHub, AWS, Firebase
ক্লাউড কম্পিউটিং-এর ভবিষ্যৎ
বিশ্বব্যাপী ক্লাউড মার্কেট দ্রুত বাড়ছে। IDC অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের ৯০% ব্যবসা ক্লাউডে চলে আসবে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা:
- AI ও মেশিন লার্নিং পুরোপুরি ক্লাউডে প্রসেস হবে
- স্মার্ট শহর ও স্মার্ট ডিভাইসগুলো ক্লাউড নির্ভর হবে
- ব্যক্তিগত তথ্য আরও স্বয়ংক্রিয় ও সুরক্ষিত হবে
উপসংহার
ক্লাউড কম্পিউটিং শুধু প্রযুক্তি নয়, এটি একটি বিপ্লব। এটি আমাদের কাজের ধরন, তথ্য সংরক্ষণের উপায় এবং ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। আপনি যখন কোনো ফাইল Google Drive-এ রাখেন বা YouTube-এ ভিডিও দেখেন—তখনই আপনি এই বিপ্লবের অংশ।